ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৪ আগস্ট ২০২৫
  1. আজ দেশজুড়ে
  2. আজকের সর্বশেষ
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি সংবাদ
  5. খাদ্য ও পুষ্টি
  6. খুলনা
  7. খেলাধুলা
  8. চট্টগ্রাম
  9. চাকরি-বাকরি
  10. ছড়া
  11. জাতীয়
  12. জীবনযাপন
  13. ঢাকা
  14. তথ্যপ্রযুক্তি
  15. ধর্ম
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঢাকায় শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা উদ্বেগজনক: গবেষকরা সতর্ক করছেন জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা

নিজস্ব সংবাদদাতা
আগস্ট ১৪, ২০২৫ ৭:০১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সিসা শুধু শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত একটি ধাতু নয়, বরং এটি মানুষের জন্য অদৃশ্য ও দীর্ঘস্থায়ী বিষ। এই ধাতু মানবদেহে প্রবেশ করার পর বছরের পর বছর হাড়ে জমা হয় এবং ধীরে ধীরে মস্তিষ্কসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থায়ী ক্ষতি ঘটায়। সিসার বিষক্রিয়ায় একবার আক্রান্ত হলে এর প্রভাব মুছে যায় না। এটি শিশুদের মেধা, শেখার ক্ষমতা ও আচরণে গুরুতর প্রভাব ফেলে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ, স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সতর্ক করে বলেছে—রক্তে সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই।

আইসিডিডিআর,বি এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ সিসা বিষক্রিয়ায় বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ২ থেকে ৪ বছর বয়সী ৫০০ শিশুর রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। ফলাফল ছিল ভয়াবহ—গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি শিশুর রক্তেই সিসা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) নির্ধারিত রেফারেন্স সীমা ৩৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে বেশি। আরও উদ্বেগের বিষয়, এই শিশুদের অর্ধেকের রক্তে সিসার মাত্রা প্রতি লিটারে ৬৭ মাইক্রোগ্রামেরও বেশি ছিল।

গবেষকরা দেখেছেন, শিল্পকারখানার নিকটবর্তী এলাকার শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। যারা সিসা নির্গমনকারী কারখানা—যেমন ব্যাটারি পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র বা ধাতু গলানোর কারখানা—থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে, তাদের রক্তে সিসার মাত্রা দূরের এলাকার শিশুদের তুলনায় গড়ে ৪৩ শতাংশ বেশি। ঢাকায় প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ এই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সীমার মধ্যে বাস করছে।

শুধু শিল্প নয়, পারিবারিক পরিবেশও সিসা বিষক্রিয়ার বড় উৎস। গৃহস্থালির ধুলাবালি, সিসাযুক্ত রান্নার পাত্র, প্রসাধনী এবং ঘরের ভেতরে ধূমপান—সবই শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা বাড়ায়। ধূমপান করা হয় এমন ঘরের শিশুদের রক্তে সিসার পরিমাণ গড়ে ১২ শতাংশ বেশি পাওয়া গেছে। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের শিশুরা তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা এই সংকটে সামাজিক বৈষম্যের চিত্রও স্পষ্ট করে।

গবেষকরা মনে করছেন, এই বিপর্যয় সম্পূর্ণভাবে মানুষের তৈরি। সিসাদূষণের উৎস শনাক্ত করা গেছে, ক্ষতির প্রমাণও বৈজ্ঞানিকভাবে রয়েছে। তবু কার্যকর পদক্ষেপে দেরি হলে প্রভাব শুধু হাসপাতালে সীমাবদ্ধ থাকবে না; তা স্কুলে শিশুদের শেখার ক্ষমতা, ভবিষ্যৎ কর্মক্ষমতা এবং দেশের মেধাশক্তি ক্ষয়ে দেবে।

তবে আশার আলোও রয়েছে। পূর্বে আইসিডিডিআর,বি-এর গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভবতী নারীদের রক্তে সিসার প্রধান উৎস ছিল সিসামিশ্রিত হলুদ গুঁড়া। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ফলে ২০১৯ সালে যেখানে বাজারের ৪৭ শতাংশ হলুদে সিসা পাওয়া যেত, ২০২১ সালে তা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। একই সময়ে গর্ভবতী নারীদের রক্তে সিসার মাত্রাও নাটকীয়ভাবে কমে যায়। এটি প্রমাণ করে—সঠিক নীতি, বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং জনগণের অংশগ্রহণ মিললে সংকট মোকাবিলা সম্ভব।

গবেষক দল বেশ কিছু সুপারিশ করেছে

  • সিসা নির্গমনকারী শিল্পগুলোকে আবাসিক এলাকা ও বিদ্যালয়ের কাছ থেকে স্থানান্তর করা।

  • সিসাযুক্ত রং, রান্নার পাত্র, প্রসাধনী ও শিশুদের খেলনার উৎপাদন ও বিক্রিতে কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ।

  • জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে পারিবারিক পর্যায়ে সিসামুক্ত বিকল্প পণ্য ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া।

  • নিয়মিতভাবে পানি ও ভেজা কাপড় দিয়ে ঘরের ধুলা পরিষ্কার করা এবং ঘরের ভেতরে ধূমপান বন্ধ করা।

  • শিশুদের পুষ্টিতে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবারের গুরুত্ব বাড়ানো।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—এটি শুধু স্বাস্থ্য সংকট নয়; এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটও। এখনই সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিশুদের সিসা থেকে রক্ষা করা মানে জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষা করা, আর সেই সময় এখনই।

আমাদের সাইটে আমরা নিজস্ব সংবাদ তৈরির পাশাপাশি দেশের এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যম থেকে গুরুত্বপূর্ণ খবর সংগ্রহ করে নির্ভুল সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। আমরা সবসময় তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা এবং সঠিকতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। তবে, যদি কোনো সংবাদ নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকে, তাহলে আমরা আপনাকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যম বা নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য।

এই সাইটের সব ধরণের সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও এবং ভিডিও কন্টেন্ট কপিরাইট আইন দ্বারা সুরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই কন্টেন্ট ব্যবহারের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আইনত শাস্তিযোগ্য। আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের একটি সুরক্ষিত ও তথ্যবহুল অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমাদের নিউজ সাইটের মাধ্যমে পাওয়া যেকোনো তথ্য ব্যবহারের আগে দয়া করে সেই তথ্যের উৎস যাচাই করতে ভুলবেন না। আপনাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আমাদের সাথেই থাকুন, সর্বশেষ খবর এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে।
%d bloggers like this: