বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান। গ্রামবাংলার কৃষক-জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে সোনালী ধান ও সবুজ মাঠ। যুগ যুগ ধরে কৃষকরা নানা কষ্ট সহ্য করে ধান চাষ করে আসছে। তবে সময়ের সাথে পাল্টেছে পদ্ধতি। আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ধান চাষ করলে কম খরচে বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। চলুন ধাপে ধাপে জেনে নিই কিভাবে সঠিকভাবে ধান চাষ করতে হয়।
মাটি ও জমি নির্বাচন
ধান চাষের জন্য দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। জমিতে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা থাকতে হবে। আগাছামুক্ত সমতল জমি নির্বাচন করা ভালো। একই জমিতে কয়েক বছর ধরে ধান চাষ করা হলে মাটির উর্বরতা কমে যেতে পারে, তাই মাঝে মাঝে ডাল, সরিষা বা অন্যান্য ফসল চাষ করা ভালো।
বীজ নির্বাচন ও বীজ শোধন
ভালো ফলনের জন্য উচ্চ ফলনশীল (HYV) বা স্থানীয় ভালো মানের জাত বেছে নিতে হবে। বীজ বাছাই করার সময় পোকামাকড়ের ক্ষতিগ্রস্ত ও রোগাক্রান্ত বীজ বাদ দিতে হবে।
বীজ শোধন পদ্ধতি:
-
প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক (যেমন: ভিটাভ্যাক্স) মিশিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
-
অথবা লবণ পানিতে বীজ ভিজিয়ে ভাসা বীজ ফেলে দিন এবং ডুবে যাওয়া বীজ ধুয়ে শুকিয়ে বপন করুন।
এতে চারা শক্ত ও সুস্থ হবে।
চারা উৎপাদন
ধান চাষের জন্য প্রথমে চারা তৈরি করতে হবে। সাধারণত বোরো মৌসুমে নেট বা পলিথিন বিছানো বীজতলায় এবং আমন মৌসুমে খোলা বীজতলায় চারা তৈরি করা হয়।
-
বীজতলা আগাছামুক্ত ও সমান রাখুন।
-
প্রতি শতকে ৮-১০ কেজি জৈব সার, ১৫০-২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম পটাশ, ১০০ গ্রাম টিএসপি মিশিয়ে মাটি তৈরি করুন।
-
বীজ ছিটিয়ে দিয়ে হালকা মাটির প্রলেপ দিন।
১০–৩০ দিনের মধ্যে চারা রোপণের উপযুক্ত হয়।
জমি প্রস্তুত
ধান চাষে ভালো ফলনের জন্য জমি সঠিকভাবে প্রস্তুত করা জরুরি।
-
প্রথমে জমি চাষ (হাল) করে আগাছা সরিয়ে নিন।
-
জমি ভালোভাবে চাষ করে কাদা তৈরি করুন এবং জমি সমান করুন।
-
জৈব সার (গোবর) ও রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি) প্রয়োগ করুন।
সাধারণভাবে প্রতি বিঘায় (৩৩ শতক) প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন:
-
ইউরিয়া – ২৫-৩০ কেজি
-
টিএসপি – ১৫-২০ কেজি
-
এমওপি – ১৫-২০ কেজি
-
জৈব সার – ৩০০-৪০০ কেজি
চারা রোপণ
-
চারা ২০–৩০ দিন বয়সী হলে রোপণ করা ভালো।
-
প্রতি গুচ্ছে ২–৩টি চারা রেখে ৮–১০ ইঞ্চি দূরত্বে রোপণ করুন।
-
রোপণের পর জমিতে হালকা পানি দিন।
সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা
ধানের জমিতে সবসময় অল্প পানি থাকতে হবে। খুব বেশি পানি জমা বা একেবারে শুকনো রাখা যাবে না।
-
চারা রোপণের পর প্রথম ৭–১০ দিন জমিতে হালকা পানি রাখুন।
-
ফুল আসার সময় ও শিষ বের হওয়ার সময় পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করুন।
-
ফসল পাকার ১০–১৫ দিন আগে পানি দেওয়া বন্ধ করে দিন।
আগাছা ও পোকামাকড় দমন
-
জমি আগাছামুক্ত রাখতে ১৫–২০ দিন পর পর নিড়ানি দিন।
-
পোকামাকড় (পানা পোকার ঝাঁক, পাতা মোড়ানো পোকা, গলপচা ইত্যাদি) দেখা গেলে দ্রুত বালাইনাশক ছিটিয়ে ব্যবস্থা নিন।
-
জৈব ও সমন্বিত পদ্ধতি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
ধান কাটা ও মাড়াই
ধানের শীষ ৮০–৯০% সোনালি রঙ ধারণ করলে ধান কাটার উপযুক্ত সময় হয়। বেশি দেরি করলে দানার ক্ষতি হয়।
-
ধান কাটার পর মাঠে ২–৩ দিন শুকিয়ে মাড়াই করুন।
-
মাড়াইয়ের পর ভালোভাবে শুকিয়ে ধান মজুত করুন।
পরামর্শ
✅ উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী জাত বাছাই করুন।
✅ সমান জমি ও পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা রাখুন।
✅ সময়মতো সার ও পানি দিন।
✅ পরামর্শের জন্য স্থানীয় কৃষি অফিস বা বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।
উপসংহার
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো ধান। বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে উৎপাদন যেমন বাড়ে, তেমনি কৃষকের আয়ও বাড়ে। সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করে প্রতিটি কৃষকই সোনালী ফসল ঘরে তুলতে পারে।
এই সাইটের সব ধরণের সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও এবং ভিডিও কন্টেন্ট কপিরাইট আইন দ্বারা সুরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই কন্টেন্ট ব্যবহারের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আইনত শাস্তিযোগ্য। আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের একটি সুরক্ষিত ও তথ্যবহুল অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমাদের নিউজ সাইটের মাধ্যমে পাওয়া যেকোনো তথ্য ব্যবহারের আগে দয়া করে সেই তথ্যের উৎস যাচাই করতে ভুলবেন না। আপনাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আমাদের সাথেই থাকুন, সর্বশেষ খবর এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে।