ইসরায়েলের তীব্র বোমাবর্ষণে গাজায় অন্তত ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানিয়েছে আল জাজিরা। এদের মধ্যে অন্তত আটজন খাদ্য সহায়তা নেওয়ার সময় মারা যান। আহতদের নিয়ে হাসপাতালে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
এর মধ্যে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদও সমর্থন জানিয়েছে, তবে তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা চেয়েছে।
এই ঘোষণা এসেছে সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরের আগে, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে চাপ দিচ্ছেন।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, ইসরায়েলের এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৭,২৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১,৩৫,৬২৫ জন। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন আনুমানিক ১,১৩৯ জন এবং আটক আছেন ২০০ জনের বেশি।
আজকের হামলার বিবরণ:
-
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায়, যা ‘মানবিক এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে আশ্রয়কেন্দ্রে গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ৬ জন নিহত ও ১০ জন আহত।
-
গাজা শহরের জেইতুন এলাকায় আল-শাফি স্কুলে হামলায় অন্তত ৫ জন নিহত।
-
মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়িতে বিমান হামলায় নিহত ২।
-
নুসাইরাতে আল-আওদা হাসপাতালে, খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রে হামলায় নিহত ৪।
-
শেখ রাদওয়ান এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা হামলায় আহত ১১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুরাও আছে।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কী আছে?
আল জাজিরা প্রাপ্ত খসড়া প্রস্তাবের মূল শর্তগুলো:
-
৬০ দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি, যা যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
-
হামাস প্রথম দিনেই ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন নিহত ইসরায়েলি বন্দিকে ফেরত দেবে।
-
জরুরি ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করবে এবং তা জাতিসংঘ ও রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে বিতরণ হবে।
-
ইসরায়েলের সব সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে এবং নজরদারি ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে।
-
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তর, নেতসারিম করিডর ও দক্ষিণ থেকে কিছুটা পিছু হটবে।
-
স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনাও শুরু হবে এই সময়ে।
হাসপাতালগুলোর করুণ অবস্থা:
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জ্বালানির ঘাটতি চরমে পৌঁছেছে। হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে জেনারেটর চালানোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই। ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানি সরবরাহ কমিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ।
আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর:
-
হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসসাম ব্রিগেড জানায়, তারা খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। দু’টি মার্কাভা ট্যাঙ্ক ও একটি সাঁজোয়া গাড়ি লক্ষ্য করা হয়েছে।
-
লেবাননের দক্ষিণে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একজন নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন।
-
মানবিক সহায়তা বিতরণে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। হামাস চায় এটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এবং শত শত বিতরণ কেন্দ্রে হোক, যেখানে ইসরায়েল কেবল চারটি বিতরণ কেন্দ্র চায় যা ফাঁদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ।
উপসংহার:
গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ থামার কোনো লক্ষণ নেই। যুদ্ধবিরতির আলোচনার সম্ভাবনা জেগে উঠলেও হামলার তীব্রতা কমছে না। প্রতিটি নতুন হামলা মনে করিয়ে দিচ্ছে — গাজায় আর কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়।
ছবি: ওমর আল-কাত্তা/এএফপি, আবদেল কারিম হানা/এপি
সূত্র: আল জাজিরা
এই সাইটের সব ধরণের সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও এবং ভিডিও কন্টেন্ট কপিরাইট আইন দ্বারা সুরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই কন্টেন্ট ব্যবহারের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আইনত শাস্তিযোগ্য। আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের একটি সুরক্ষিত ও তথ্যবহুল অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমাদের নিউজ সাইটের মাধ্যমে পাওয়া যেকোনো তথ্য ব্যবহারের আগে দয়া করে সেই তথ্যের উৎস যাচাই করতে ভুলবেন না। আপনাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আমাদের সাথেই থাকুন, সর্বশেষ খবর এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে।