কুমিল্লা-৬ আসনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্র, যেখানে কুমিল্লার রাজনীতির দিক-নির্দেশক ভূমিকা রয়েছে। এই আসনটি মূলত কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, সিটি করপোরেশন (কুসিক) এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত। গত কয়েক বছরে এই আসনে বিএনপির মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাবেক কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং বিএনপির চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন।
২০০১ সালে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেন। তিনি এ আসন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত হলেও, তার মৃত্যুর পর এই আসনটি বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে, হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতা হিসেবে দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ২০১২ ও ২০১৭ সালে সাক্কু কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলেও ২০২২ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে পরাজিত হন। এরপর দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও পরবর্তীতে ২০২৩ সালে উপনির্বাচনে কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহারের কন্যা ডা. তাহসিন বাহার সুচি মেয়র নির্বাচিত হন, তবে সাক্কু ও কায়সার ওই নির্বাচনে পরাজিত হন।
এই পরাজয়ের পর থেকেই সাক্কুর মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পায় এবং তিনি এখন দলের মনোনয়ন না পেলেও কুমিল্লা-৬ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সাক্কু জানিয়েছেন, “যদি দলীয় মনোনয়ন পাই, তবে আমি নির্বাচন করব। না হলে, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করব।” এর ফলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, যদি সাক্কু এবং ইয়াছিন উভয়ই নির্বাচনে অংশ নেন, তবে এতে বিএনপির ভোট বিভক্ত হবে এবং জামায়াতের প্রার্থী সুযোগ পেতে পারে।
এ বিষয়ে সাক্কুর ভাই কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য কাইমুল হক রিঙ্কু বলেছেন, “আমি বিএনপি করি, দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই থাকব।” একইভাবে, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু এবং সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু জানিয়েছেন, দল যদি কাউকে মনোনয়ন দেয়, তবে তারা তার পক্ষেই কাজ করবেন।
এদিকে, সাক্কুর পা ধরে সালাম করার ইস্যু নিয়ে একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সাক্কু দাবি করেছেন, “হাসিনা আমার বড় আপা। উনি আমার বোনের সঙ্গে ইডেন কলেজে একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। এজন্য আমি তাকে আপা বলে ডাকি এবং সামাজিক সৌজন্যতার কারণে পায়ে ধরে সালাম করেছি।” তার মতে, এটি কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, বরং একটি মানবিক সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
অন্যদিকে, হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিন সাক্কুর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “সাক্কু তো বিএনপির কেউ না। আমি দলের বাইরে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।” তিনি আরও বলেন, সাক্কু সরাসরি তার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি, তাই তিনি বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে চান না।
এখন কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপির ভবিষ্যত প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে। যদি সাক্কু এবং ইয়াছিন দুজনেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, তবে তা কুমিল্লার রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায় তৈরি করতে পারে। বিএনপি এখান থেকে যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে, সেই প্রার্থীই নির্বাচনে জয়ী হবেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত দলের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত হয়নি।
এই সাইটের সব ধরণের সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও এবং ভিডিও কন্টেন্ট কপিরাইট আইন দ্বারা সুরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই কন্টেন্ট ব্যবহারের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আইনত শাস্তিযোগ্য। আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের একটি সুরক্ষিত ও তথ্যবহুল অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমাদের নিউজ সাইটের মাধ্যমে পাওয়া যেকোনো তথ্য ব্যবহারের আগে দয়া করে সেই তথ্যের উৎস যাচাই করতে ভুলবেন না। আপনাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আমাদের সাথেই থাকুন, সর্বশেষ খবর এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে।