নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যার নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল—হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা না দিয়ে বহু রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেন।
অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, শুধুমাত্র কিডনি, ব্রেইন স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রেফার করা হয়।
এই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের পর বিষয়টির প্রকৃত চিত্র জানতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
আজ বৃহস্পতিবার তিনি ৩০০ শয্যার নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে একটি আধুনিক হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার চালুর পাশাপাশি তিনটি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করেন।
হাসপাতালের তিনটি পৃথক স্থানে বসানো এই ডিজিটাল বোর্ডগুলোতে প্রতিদিনের হালনাগাদ তথ্য দেখা যাবে—কতজন রোগী ভর্তি আছেন, কতজন রিলিজ পেয়েছেন, এবং কোন কারণে কতজন রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এই প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ রোগীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের আস্থাহীনতা ও ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন,
“আমাদের কাছে বারবার অভিযোগ এসেছে—রোগীরা চিকিৎসা নিতে এলে তাদের অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা যখন হাসপাতালে ভিজিট করি, দেখি প্রতিটি বেডে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত মাসে প্রায় ৬৫ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,“তাহলে প্রশ্ন হলো—কেউ বলছে হাসপাতালে গেলেই রেফার করা হয়, কেউ বলছে সেবা দেওয়া হচ্ছে—আসল চিত্রটা কী?
আমরা সেটিই জনসমক্ষে আনতে চেয়েছি।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রতিদিনের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদর্শিত হবে—কতজন রোগী এসেছেন, ভর্তি হয়েছেন, রেফার হয়েছেন, কেন রেফার করা হয়েছে, কতজন অপারেশনে গেছেন এবং কতটি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে।”
ডিসি জাহিদুল বলেন,“এই উদ্যোগের মাধ্যমে হাসপাতাল নিয়ে যে ভুল ধারণা ও সন্দেহ ছিল, তা দূর হবে।
সরকার সাধারণ মানুষের জন্য হাসপাতাল তৈরি করেছে—মানুষ সেখানে এসে সেবা নেবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
আজকের এই ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে আমরা চাই, আর যেন কোনো বিভ্রান্তি বা সন্দেহের অবকাশ না থাকে।
মিডিয়া কর্মী হোন বা রোগীর স্বজন—সবাই সহজেই জানতে পারবেন প্রতিদিন কতজন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বা রিলিজ পেয়েছেন।”
হাসপাতালের বিভিন্ন চলমান সমস্যায় তাঁর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন,
“দ্রুতই ৩০ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন সার্বিক নিরাপত্তার জন্য।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাসার বলেন,“আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এই মাসে প্রায় ২০০ রোগীর বড় অপারেশন হয়েছে।
তবে কিছু রোগীকে রেফার করতেই হয়, কারণ এখানে হার্ট, ব্রেইন ও কিডনি বিভাগের ব্যবস্থা এখনো চালু হয়নি।
হাসপাতালটির বয়স প্রায় ৪০ বছর।
৫০০ শয্যার অনুমোদন কার্যকর হলে এই বিভাগগুলো চালু করা হবে। তখন আর রোগীদের অন্য হাসপাতালে রেফার করতে হবে না।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড চালু হওয়ায় হাসপাতাল ও রোগীদের মধ্যে আস্থার সংকট দূর হবে এবং সেবার মান আরও উন্নত হবে।
সিভিল সার্জন ডা. এ. এফ. এম. মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, এবং ডাক্তার ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই সাইটের সব ধরণের সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও এবং ভিডিও কন্টেন্ট কপিরাইট আইন দ্বারা সুরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই কন্টেন্ট ব্যবহারের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আইনত শাস্তিযোগ্য। আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের একটি সুরক্ষিত ও তথ্যবহুল অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমাদের নিউজ সাইটের মাধ্যমে পাওয়া যেকোনো তথ্য ব্যবহারের আগে দয়া করে সেই তথ্যের উৎস যাচাই করতে ভুলবেন না। আপনাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আমাদের সাথেই থাকুন, সর্বশেষ খবর এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে।
