রাজধানীর অন্যতম প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারপাশের ফুটপাত দীর্ঘদিন ধরেই হকারদের দখলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ইমারজেন্সি ও বার্ন ইউনিট প্রবেশ গেইট ও ৩ নম্বর গেট এলাকা এখন কার্যত স্থায়ী হকার বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান, ফলের স্টল, পোশাক মাস্ক জুতা বিক্রেতা, নানা ধরনের ফেরিওয়ালাদের অবাধ চলাচল দেখা যায়। এর ফলে রোগী, স্বজন ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ফুটপাত দখলের কারণে সাধারণ মানুষকে প্রতিদিন হাঁটাচলা করতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। রোগী নিয়ে হাসপাতালে ঢুকতে গিয়ে স্বজনদের চোখে মুখে বিরক্তি ও উৎকণ্ঠার ছাপ দেখা যায়। হাসপাতালে আসা জরুরি রোগী ও অ্যাম্বুলেন্সকেও সঙ্কুচিত পথ অতিক্রম করতে হয়। অনেক সময় ফুটপাত দখলে রেখে দোকান বসানোর কারণে মূল রাস্তার একাংশও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে দোকান বসানো নিষেধ করে আনসার সদস্যদের প্রতিদিনের নিয়মিত মাইকিং এখন স্থানীয়দের কাছে লোক দেখানো’ কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। তারা জানান, শুধু নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দিলেই ফুটপাত হকারমুক্ত হয় না। বরং মাইকিং শেষ হলেই হকাররা আবার আগের জায়গায় বসে পড়ে। গোপন সূত্রের তথ্যমতে, ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ গ্রহণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, কিছু আনসার সদস্য এবং হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা হকারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের বসতে দেন। সেই টাকার বিনিময়ে হকাররা নির্বিঘ্নে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে।
এক হকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখানে বসতে হলে সবাইকে টাকা দিতে হয়। নিয়ম করেই টাকা দিতে হয়। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ আসে, তখন দুই তিন দিন থাকি না, পরে আবার ডাক দিয়ে বসতে দেয়।ফুটপাত দখলমুক্ত করতে মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও তা স্থায়ী সমাধান তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। উচ্ছেদ অভিযানের কয়েক দিনের মধ্যেই দোকানীরা আবার আগের মতো জায়গা দখল করে নেয়। স্থানীয়রা মনে করেন, এসব অভিযান কেবল দেখানোর জন্য। বাস্তবে দীর্ঘমেয়াদি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
৩ নম্বর গেটের সামনে রোগী নিয়ে আসা পরিবারের সদস্য শামীম মিয়া বলেন, হাসপাতালে ঢুকতে গিয়ে এত ভিড়ে ধাক্কা ধাক্কির শিকার হতে হয়। রোগী অসুস্থ, তবুও ফুটপাত দিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। দোকান আর মানুষের ভিড়ে এগোনোই অসম্ভব হয়ে যায়।হকারদের কারণে শুধু যাতায়াত ব্যাহতই নয়, হাসপাতালের আশপাশে ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। খাবারের দোকানগুলোতে খোলা চুলায় রান্না, বর্জ্য ইচ্ছেমতো রাস্তায় ফেলা, স্যাঁতসেঁতে বাতাসে দুর্গন্ধ সব মিলিয়ে রোগীদের জন্য পরিবেশটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
বিভিন্ন ভুক্তভোগীরা বলেন, ঢাকার সবচেয়ে বড় হাসপাতালের সামনে যদি এমন অব্যবস্থা থাকে, তাহলে মানুষের ভরসা কোথায়? কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। ফুটপাত দখলমুক্ত করা না গেলে মানুষের যাতায়াত, জরুরি সেবা সবকিছুই ব্যাহত হবে।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ফুটপাত দখল ইস্যুতে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ মানুষের দাবি একটাই ফুটপাত দখলমুক্ত করে রোগীদের চলাচল স্বাভাবিক করা হোক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এই সাইটের সব ধরণের সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও এবং ভিডিও কন্টেন্ট কপিরাইট আইন দ্বারা সুরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এই কন্টেন্ট ব্যবহারের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আইনত শাস্তিযোগ্য। আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের একটি সুরক্ষিত ও তথ্যবহুল অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমাদের নিউজ সাইটের মাধ্যমে পাওয়া যেকোনো তথ্য ব্যবহারের আগে দয়া করে সেই তথ্যের উৎস যাচাই করতে ভুলবেন না। আপনাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আমাদের সাথেই থাকুন, সর্বশেষ খবর এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে।
